সূরা লাহাব(অগ্নিশিখা)
সূরাঃ১১১, আয়াতঃ৫, রুকুঃ১,
মক্কায় অবতীর্ণ
সূরা আল লাহাব (আরবি: سورة اﻟﻠﻬﺐ) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১১১ নম্বর সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫ এবং সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
আবু লাহাবের আসল নাম
ছিল আবদুল ওয্যা। সে ছিল আবদুল মোত্তালিবের অন্যতম সন্তান। গৌরবর্ণের কারণে তার
ডাক নাম হয়ে যায় আবু লাহাব। কোরআন পাক তার আসল নাম বর্জন করেছে। কারণ সেটা মুশরিকসুলভ। এছাড়া "আবু
লাহাব" ডাক নামের মধ্যে জাহান্নামের সাথে বেশ মিলও রয়েছে। সে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) - এর কট্টর শত্রু ও ইসলামের ঘোর বিরোধী ছিল এবং রসূলুল্লাহ্
(সাঃ)-কে কষ্ট দেয়ার প্রয়াস পেত। তিনি যখন মানুষকে ঈমানের দাওয়াত দিতেন, তখন সে সাথে
সাথে যেয়ে তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করত।
আরবী:
بِسۡمِ
اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ
الرَّحِیۡمِ
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ ١
مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ ٢
سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ٣
وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ٤
فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍ ٥
বাংলা অনুবাদঃ
1. ধ্বংস হোক আবু
লাহাবের হস্তদ্বয় এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।
2. তার ধন-সম্পদ আর
সে যা অর্জন করেছে তা তার কোন কাজে আসল না।
3. অচিরেই সে শিখা
বিশিষ্ট জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে,
4. আর তার স্ত্রীও-
যে কাঠবহনকারিণী (যে কাঁটার সাহায্যে নবী-কে কষ্ট দিত এবং একজনের কথা অন্যজনকে ব’লে পারস্পরিক বিবাদের
আগুন জ্বালাত)।
5. আর (দুনিয়াতে
তার বহনকৃত কাঠ-খড়ির পরিবর্তে জাহান্নামে) তার গলায় শক্ত পাকানো রশি বাঁধা
থাকবে।
নাযিল
হওয়ার স্থান ও সময়ঃ
এটি
মাক্কি সূরা,
বোখারী ও মুসলিম এর বর্ণনানুসারে, রসুল সঃ এর উপরে যখন অবতীর্ণ হয় "আর আপনি আপনার নিকটজনদেরকে ভীতি প্রদর্শন করুন" তখন তিনি সঃ সাফা পর্বতের চূড়ায় তাঁর আত্মীয় স্বজনদেরকে সমবেত করে তাদেরকে আল্লাহ্র ভয় প্রদর্শন
করেন। প্রতিউত্তরে আবু লাহাব কটাক্ষ করলে সূরাটির সুত্রপাত হিসাবে প্রথম তিন আয়াত
অবতীর্ণ হয়।
শানে
নূযুলঃ
আল্লাহ্ একটি আয়াত অবতীর্ণ করলে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সাফা পর্বতে আরোহণ করে কোরাইশ গোত্রের উদ্দেশে "আবদে মানাফ" ও "আবদুল মোত্তালিব" ইত্যাদি নাম সহকারে ডাক দিলেন। এভাবে ডাক দেয়া তখন আরবে
বিপদাশংকার লক্ষণ রূপে বিবেচিত হত। ডাক শুনে কোরাইশ গোত্র পর্বতের পাদদেশে একত্রিত হল। রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ "যদি আমি বলি যে, একটি
শত্রুদল ক্রমশঃই এগিয়ে আসছে এবং সকাল বিকাল যে কোন সময় তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে
পড়বে,
তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি?" সবাই একবাক্যে বলে উঠলঃ "হাঁ, অবশ্যই
বিশ্বাস করব।" অতঃপর তিনি বললেনঃ "আমি (শিরক ও
কুফরের কারণে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নির্ধারিত) এক ভীষণ আযাব সর্ম্পকে তোমাদেরকে সতর্ক করছি।"
একথা শুনে আবু
লাহাব বললঃ "ধ্বংস হও তুমি, এজন্যেই
কি আমাদেরকে একত্রিত করেছ?"
অতঃপর সে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে পাথর মারতে উদ্যত হল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়।
বিষয়বস্তুর বিবরণঃ
প্রথমোক্ত আয়াতত্রয়ের মর্মার্থ হচ্ছে, আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হোক। ধ্বংস
নেমে আসুক তার নিজের উপরেও। তার অর্থবিত্ত ও উপার্জন তার কোনো উপকারে আসেনি। আসবেও
না। দোজখের লেলিহান অগ্নিকুণ্ডে তার প্রবেশের ক্ষণ অত্যাসন্ন।
এখানে তাব্বাত অর্থ ধ্বংস হোক। এর ধাতুমূল তাবাব যার অর্থ, এমনই এক গহবর, যা সমূহ বিপদ ডেকে আনে। ইয়াদা আবী লাহাব অর্থ আবু লাহাবের দুই হস্ত। অর্থাৎ আবু লাহাব স্বয়ং। কোনো কোনো বিদ্বান বলেছেন, আবু লাহাব রসুল স: কে আঘাত করার জন্য হাতে পাথর তুলে নিয়েছিলো। তাই এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে তার হস্তদ্বয়ের কথা। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এখানে হস্তদ্বয় অর্থ ইহজগত ও পরজগত। অর্থাৎ তার ইহকাল-পরকাল দুই কালই ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত। অথবা এখানে হস্তদ্বয় কথাটির দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে তার বিত্ত ও প্রভুত্বকে।
হজরত ইবনে মাসউদ বলেছেন, রসুল স: যখন তাঁর স্বজনদেরকে ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন, তখন আবু লাহাব বললো, ভাতিজা! তুমি আমাকে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছো। কিন্তু আমি তো শাস্তির পরোয়াই করি না। প্রয়োজন হলে আমি আমার সন্তান-সন্ততি-ধন-সম্পদ সবকিছুর বিনিময়ে তোমার কথিত শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভ করবো। তখন পরবর্তী আয়াত অবতীর্ণ হয়।
মা আগনা আ’নহু মালুহূ ওয়ামা কাসাব অর্থ তার ধন সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোনো কাজে আসেনি। অর্থাৎ তার সঞ্চিত বিপুল বিত্ত-বৈভব ও উপার্জিত সম্পদ তাকে আল্লাহ্র শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। অথবা তার পুঞ্জীভূত ধন-সম্পদ ও তার উপার্জন কি তাকে আল্লাহ্র শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে? পারবে না। "ওয়ামা কাসাব" অর্থ তার উপার্জন। অথবা তার সন্তান-সন্ততি। মাতা মহোদয়া আয়েশা সিদ্দীকা বর্ণনা করেছেন, রসুল স: বলেছেন, নিজস্ব উপার্জনজাত আহার্য সর্বোত্তম ও পবিত্রতম। তোমাদের সন্তান-সন্ততিও তোমাদের উপার্জন। বোখারী, তিরমিজি।
সা ইয়াস্লা নারান জাতা লাহাব অর্থ অচিরে সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে। "জাতা লাহাব" অর্থ লেলিহান অগ্নি। অর্থাৎ সেদিন আর বেশী দূরে নয়, যখন আবু লাহাব দগ্ধীভূত হতে থাকবে দোজখের লেলিহান আগুনে। পরের আয়াতদ্বয়ে বলা হয়েছে এবং তার স্ত্রীও, যে ইন্ধন বহন করে (এখানে ওয়াম্রাআতুহু অর্থ তার স্ত্রীও অর্থাৎ আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলকেও ভোগ করতে হবে একই পরিণতি এবং হাম্মালাতাল হাত্বব অর্থ যে ইন্ধন বহন করে) আরবী ভাষায় পরনিন্দুককে বলা হয় কাষ্ঠ, বা ইন্ধন বহনকারিণী। অর্থাৎ পর নিন্দাকারিণী। ইবনে ইসহাক হামাদান খান্দানের জনৈক ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, রসুল স. এর গমনাগমনের পথে আবু লাহাবের স্ত্রী কাঁটা পুঁতে রাখতো। সেদিকে ইঙ্গিত করেই অবতীর্ণ হয় এই আয়াত।
ফী জ্বীদিহা হাবলুম্ মিম্ মাসাদ্ অর্থ তার গলদেশে পাকানো রজ্জু। জ্বীদ অর্থ গলদেশ, গলা। আর মাসাদ অর্থ লৌহশৃঙ্খল, ওই লৌহশৃঙ্খল তার (পিঠের উপর দিয়ে) গলায় আটকিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
এখানে তাব্বাত অর্থ ধ্বংস হোক। এর ধাতুমূল তাবাব যার অর্থ, এমনই এক গহবর, যা সমূহ বিপদ ডেকে আনে। ইয়াদা আবী লাহাব অর্থ আবু লাহাবের দুই হস্ত। অর্থাৎ আবু লাহাব স্বয়ং। কোনো কোনো বিদ্বান বলেছেন, আবু লাহাব রসুল স: কে আঘাত করার জন্য হাতে পাথর তুলে নিয়েছিলো। তাই এখানে বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে তার হস্তদ্বয়ের কথা। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এখানে হস্তদ্বয় অর্থ ইহজগত ও পরজগত। অর্থাৎ তার ইহকাল-পরকাল দুই কালই ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত। অথবা এখানে হস্তদ্বয় কথাটির দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে তার বিত্ত ও প্রভুত্বকে।
হজরত ইবনে মাসউদ বলেছেন, রসুল স: যখন তাঁর স্বজনদেরকে ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন, তখন আবু লাহাব বললো, ভাতিজা! তুমি আমাকে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছো। কিন্তু আমি তো শাস্তির পরোয়াই করি না। প্রয়োজন হলে আমি আমার সন্তান-সন্ততি-ধন-সম্পদ সবকিছুর বিনিময়ে তোমার কথিত শাস্তি থেকে পরিত্রাণ লাভ করবো। তখন পরবর্তী আয়াত অবতীর্ণ হয়।
মা আগনা আ’নহু মালুহূ ওয়ামা কাসাব অর্থ তার ধন সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোনো কাজে আসেনি। অর্থাৎ তার সঞ্চিত বিপুল বিত্ত-বৈভব ও উপার্জিত সম্পদ তাকে আল্লাহ্র শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। অথবা তার পুঞ্জীভূত ধন-সম্পদ ও তার উপার্জন কি তাকে আল্লাহ্র শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবে? পারবে না। "ওয়ামা কাসাব" অর্থ তার উপার্জন। অথবা তার সন্তান-সন্ততি। মাতা মহোদয়া আয়েশা সিদ্দীকা বর্ণনা করেছেন, রসুল স: বলেছেন, নিজস্ব উপার্জনজাত আহার্য সর্বোত্তম ও পবিত্রতম। তোমাদের সন্তান-সন্ততিও তোমাদের উপার্জন। বোখারী, তিরমিজি।
সা ইয়াস্লা নারান জাতা লাহাব অর্থ অচিরে সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে। "জাতা লাহাব" অর্থ লেলিহান অগ্নি। অর্থাৎ সেদিন আর বেশী দূরে নয়, যখন আবু লাহাব দগ্ধীভূত হতে থাকবে দোজখের লেলিহান আগুনে। পরের আয়াতদ্বয়ে বলা হয়েছে এবং তার স্ত্রীও, যে ইন্ধন বহন করে (এখানে ওয়াম্রাআতুহু অর্থ তার স্ত্রীও অর্থাৎ আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলকেও ভোগ করতে হবে একই পরিণতি এবং হাম্মালাতাল হাত্বব অর্থ যে ইন্ধন বহন করে) আরবী ভাষায় পরনিন্দুককে বলা হয় কাষ্ঠ, বা ইন্ধন বহনকারিণী। অর্থাৎ পর নিন্দাকারিণী। ইবনে ইসহাক হামাদান খান্দানের জনৈক ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, রসুল স. এর গমনাগমনের পথে আবু লাহাবের স্ত্রী কাঁটা পুঁতে রাখতো। সেদিকে ইঙ্গিত করেই অবতীর্ণ হয় এই আয়াত।
ফী জ্বীদিহা হাবলুম্ মিম্ মাসাদ্ অর্থ তার গলদেশে পাকানো রজ্জু। জ্বীদ অর্থ গলদেশ, গলা। আর মাসাদ অর্থ লৌহশৃঙ্খল, ওই লৌহশৃঙ্খল তার (পিঠের উপর দিয়ে) গলায় আটকিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
আবু লাহাবের পরিচয়ঃ
আবু লাহাব ছিলেন কুরায়েশ নেতা আব্দুল মুত্ত্বালিবের দশজন
পুত্রের অন্যতম। নাম আব্দুল ওযযা। অর্থ, ওযযা দেবীর গোলাম। লালিমাযুক্ত গৌরবর্ণ ও
সুন্দর চেহারার অধিকারী হওয়ায় তাকে ‘আবু লাহাব’ বা অগ্নিস্ফুলিঙ্গওয়ালা বলা হ’ত। তার আসল নাম কুরআনে
উল্লেখ করা হয়নি। কেননা তা ছিল তাওহীদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আল্লাহ তার আবু
লাহাব উপনামটি কুরআনে উল্লেখ করেছেন। কেননা এর মধ্যে তার চিরস্থায়ী জাহান্নামী
হবার দুঃসংবাদটাও লুকিয়ে রয়েছে।
আবু লাহাব ছিলেন রাসূল (সাঃ)-এর সেই প্রিয় চাচা যিনি (১)
তাঁর জন্মের খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সর্বত্র দৌড়ে গিয়ে লোকদের নিকট খবরটি
পৌঁছে দেন যে, তার মৃত ছোট ভাই আব্দুল্লাহর বংশ রক্ষা হয়েছে। আর এই সুখবরটি প্রথম তাকে
শুনানোর জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দাসী ছুওয়াইবাকে মুক্ত করে দেন। (২) তিনি ছিলেন মক্কায় রাসূল (সাঃ)-এর নিকটতম
প্রতিবেশী (৩) তার দুই ছেলে উৎবা ও উতাইবার সাথে নবুঅতপূর্বকালে রাসূল (সাঃ)-এর
দুই মেয়ে রুক্বাইয়া ও উম্মে কুলছূমের বিবাহ হয়।
এত আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সবকিছু তীব্র
বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়ে যায় রাসূল (সাঃ)-এর নবুঅত লাভের পর। আবু
লাহাব কখনোই তার ভাতিজার সুনাম-সুখ্যাতি ও নবুঅত লাভের মত উচ্চ মর্যাদা অর্জনের
বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। যেমন মেনে নিতে পারেননি অন্যতম বংশীয় চাচা আবু জাহল ও
তার সাথীরা। ফলে শুরু হয় শত্রুতা। তার পক্ষে সম্ভব কোনরূপ শত্রুতাই তিনি বাকী
রাখেননি। যেমন, (১) আবু লাহাব তার দু’ছেলেকে তাদের স্ত্রীদের তালাক
দিতে বাধ্য করেন। এই দু’মেয়েই পরবর্তীতে একের পর এক হযরত
ওছমান (রাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন। (২) রাসূল (সাঃ)-এর দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল্লাহ,
যার লকব ছিল ত্বাইয়েব ও ত্বাহের, মারা গেলে
আবু লাহাব খুশীতে বাগবাগ হয়ে সবার কাছে গিয়ে বলেন মুহাম্মাদ এখন ‘আবতার’ অর্থাৎ লেজকাটা ও নির্বংশ হয়ে গেল। সে যুগে
কারো পুত্রসন্তান না থাকলে এরূপই বলা হ’ত। একথারই প্রতিবাদে
সূরা কাওছার নাযিল হয় এবং আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, إِنَّ شَانِئَكَ
هُوَ الْأَبْتَرُ ‘নিশ্চয়ই
তোমার শত্রুই নির্বংশ’।
(৩) হজ্জের নিরাপদ মওসুমে রাসূল (সাঃ) বহিরাগত হাজীদের
তাঁবুতে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত দিতেন। তখন আবু লাহাব তাঁর পিছু নিতেন এবং লোকদের
ভাগিয়ে দিতেন এই বলে যে,يَا أَيُّهَا النَّاسُ
لاَ تُطِيْعُوْهُ فَإِنَّهُ
صَابِئٌ كَذَّابٌ ‘হে লোকসকল! তোমরা এর আনুগত্য
করো না। কেননা সে ধর্মত্যাগী, মহা মিথ্যুক’। এমনকি যুল-মাজায (ذو
المجاز) নামক বাজারে যখন তিনি লোকদের বলছিলেন, قُوْلُوْا لآ
إِلَهَ إِلاَّ
اللهُ تُفْلِحُوْا ‘তোমরা বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তাহ’লে তোমরা সফলকাম হবে’
তখন আবু লাহাব পিছন থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারছিলেন।
যাতে রাসূল (সাঃ)-এর পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়ে যায়।
আবু লাহাবের স্ত্রীঃ
নাম : ‘আওরা (العوراء) অথবা আরওয়া (أروى) বিনতে হারব ইবনে
উমাইয়া। উপনাম : উম্মে জামীল। কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের বোন। ট্যারাচক্ষু হওয়ার
কারণে তাকে ‘আওরা’ (عوراء)বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইবনুল ‘আরাবী তাকে عوراء أم
قبيح বা ‘ট্যারাচক্ষু
সকল নষ্টের মূল’ বলেন (কুরতুবী)। কুরায়েশদের নেতৃস্থানীয় মহিলাদের অন্যতম এই মহিলা রাসূল
(সাঃ)-এর বিরুদ্ধে সকল প্রকার চক্রান্তে ও দুষ্কর্মে তার স্বামীর পূর্ণ সহযোগী
ছিলেন (ইবনু কাছীর)। সর্বদা রাসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে গীবত, তোহমত ও চোগলখুরীতে
লিপ্ত থাকতেন। কবি হওয়ার সুবাদে ব্যঙ্গ কবিতার মাধ্যমে তার নোংরা প্রচারণা অন্যদের
চাইতে বেশী ছিল। চোগলখুরীর মাধ্যমে সংসারে ভাঙ্গন ধরানো ও সমাজে অশান্তির আগুন
জ্বালানো দু’মুখো ব্যক্তিকে আরবরা حَمَّالَةُ الْحَطَبِ ইন্ধন বহনকারী
বা খড়িবাহক বলত। সে হিসাবে এই মহিলাকে কুরআনে উক্ত নামেই আখ্যায়িত করা হয়েছে।
নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ার সুযোগে উক্ত মহিলা রাসূল (সাঃ)-এর যাতায়াতের পথে বা তাঁর বাড়ীর দরজার
মুখে কাঁটা ছড়িয়ে বা পুঁতে রাখতেন। যাতে রাসূল (সাঃ) কষ্ট পান।
সূরা লাহাব নাযিল হ’লে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উক্ত মহিলা হাতে
প্রস্তরখন্ড নিয়ে রাসূল (সাঃ)-কে মারার উদ্দেশ্যে কা‘বা
চত্বরে গমন করেন। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় রাসূল (সাঃ) সামনে থাকা সত্ত্বেও তিনি
তাঁকে দেখতে পাননি। অবশেষে রাসূল (সাঃ)-এর পাশে দাঁড়ানো আবুবকরের কাছে তার মনের
ঝাল মিটিয়ে বলেন, আবুবকর! তোমার সাথী নাকি আমাকে ব্যঙ্গ
করেছে? আল্লাহর কসম, যদি আমি তাকে
পেতাম, তাহ’লে এই পাথর দিয়ে তার মুখে
মারতাম। আল্লাহর কসম! আমি একজন কবি। বলেই তিনি রাগতঃস্বরে কবিতা পাঠ করেন-
مُذَمَّمًا
عَصَيْنَا + وأمْرَهُ أبَيْنَا
+ ودِينَهُ قَلَيْنَا
‘নিন্দিতের
আমরা নাফরমানী করি’।
‘তার
নির্দেশ আমরা অমান্য করি’।
‘তার
দ্বীনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি’। উল্লেখ্য যে, কুরায়েশ নেতারা রাসূল (সাঃ)-কে ‘মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত)-এর বদলে ‘মুযাম্মাম’ (নিন্দিত) নামে আখ্যায়িত করেছিল এবং ঐ
নামে তারা তাঁকে গালি দিত।
তাফসীরঃ
(১) تَبَّتْ يَدَا
أَبِيْ لَهَبٍ
وَّتَبَّ ‘ ধ্বংস হৌক আবু লাহাবের দু’হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজে’।
تَبَّ تَبَابًا অর্থ خسر، خاب، هلك ‘ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া,
নিরাশ হওয়া, ধ্বংস হওয়া ইত্যাদি। التباب অর্থ الخسار‘ধ্বংস হওয়া’। যেমন আল্লাহ বলেন, وَمَا كَيْدُ
فِرْعَوْنَ إِلاَّ
فِي تَبَابٍ ‘আর
ফেরাঊনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল পুরোপুরি’ (গাফের/মুমিন
৪০/৩৭)।
আবু লাহাব যে ভাষায় আল্লাহর রাসূলের ধ্বংস কামনা করেছিল, ঠিক সেই ভাষায় অত্র
আয়াতে তার ধ্বংস কামনা করা হয়েছে। আবু লাহাব রাসূল (সাঃ)-কে বলেছিল تَبًّا لَكَ ‘তোমার ধ্বংস হৌক’। একইভাবে তাকে বলা হয়েছে تَبَّتْ يَدَا
أَبِيْ لَهَبٍ
وَّتَبَّ ‘আবু
লাহাবের দু’হাত ধ্বংস হৌক এবং ধ্বংস হৌক সে নিজে’। এখানে দু’হাত বলার উদ্দেশ্য এই যে, মানুষ মূলতঃ দু’হাত দিয়েই সব কাজ করে থাকে। তাছাড়া
আরবদের পরিভাষায় বস্ত্তর একটি অংশকে পূর্ণ বস্ত্ত হিসাবে বুঝানো হয় এবং ব্যক্তির
দু’হাত দ্বারা মূল ‘ব্যক্তি’কে বুঝানো হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ذَلِكَ بِمَا
قَدَّمَتْ يَدَاكَ
وَأَنَّ اللهَ
لَيْسَ بِظَلاَّمٍ
لِّلْعَبِيْدِ ‘এটা
তোমার দু’হাতের কর্মফল। আর আল্লাহ বান্দাদের প্রতি যুলুম
করেন না’ (হজ্জ ২২/১০)। অন্যত্র তিনি বলেন, يَوْمَ يَنْظُرُ
الْمَرْءُ مَا
قَدَّمَتْ يَدَاهُ
وَيَقُوْلُ الْكَافِرُ
يَا لَيْتَنِيْ كُنْتُ
تُرَاباً- ‘যেদিন
মানুষ প্রত্যক্ষ করবে যা তার দু’হাত অগ্রিম প্রেরণ করেছে এবং
কাফের বলবে, হায় আফসোস! আমি যদি মাটি হ’তাম’! (নাবা ৭৮/৪০)। উভয় আয়াতেই দু’হাতকে ‘ব্যক্তি’
হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অনুরূপভাবে আলোচ্য আয়াতেও ‘আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হৌক’ অর্থ আবু লাহাব
ধ্বংস হৌক!
(২) مَا أَغْنَى عَنْهُ
مَالُهُ وَمَا
كَسَبَ ‘কোন
কাজে আসেনি তার মাল-সম্পদ এবং যা সে উপার্জন করেছে’।
অর্থাৎ যেসব ধন-সম্পদ সে তার পিতা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে
পেয়েছে এবং যা সে নিজে উপার্জন করেছে, কোন কিছুই তার কাজে আসেনি এবং তার ধ্বংস সে
ঠেকাতে পারেনি।
ইবনু আববাস (রাঃ) ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, وَمَا كَسَبَ অর্থ তার
সন্তানাদি। যেমন মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূল (সাঃ) বলেন, إِنَّ أَطْيَبَ
مَا أَكَلَ الرَّجُلُ
مِنْ كَسْبِهِ وَإِنَّ
وَلَدَهُ مِنْ
كَسْبِهِ- ‘মানুষ
যা নিজে উপার্জন করে সেটাই তার সর্বাধিক পবিত্র খাদ্য। আর তার সন্তান তার
উপার্জনের অংশ’। অর্থাৎ আবু লাহাবের মাল ও সন্তানাদি তার কোন কাজে আসেনি।
শুধু তাই নয়, তার সম্মান ও পদমর্যাদা এবং শক্তি ও ক্ষমতা কোনটাই কোন কাজে লাগেনি।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) যখন স্বীয় কওমকে ঈমানের দাওয়াত দেন ও আখেরাতে আযাবের ভয় দেখান, তখন আবু লাহাব তাচ্ছিল্য ভরে বলেছিল, إذا كان
ما يقول ابن
أخي حقا، فإني
أفتدي نفسي
يوم القيامة من
العذاب بمالي
وولدي- ‘আমার
ভাতিজার কথা যদি সঠিক হয়, তাহ’লে আমি
ক্বিয়ামতের দিন আমার ধন-সম্পদ ও সন্তানাদির বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করে নেব’। অত্র আয়াতে তার জওয়াব এসেছে (ইবনু
কাছীর)। উল্লেখ্য যে, মক্কায় গোপন দাওয়াতের
তিন বছরে যে ৪০-এর অধিক ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেন, ইবনু মাসঊদ
ছিলেন তাদের অন্যতম। অতঃপর নবুঅতের চতুর্থ বর্ষে ছাফা পাহাড়ে অত্র দাওয়াতের ঘটনা
ঘটে। আবু লাহাবের সন্তানদের ইবনু আববাস (রাঃ) الكسب الخبيث বা ‘নষ্ট উপার্জন’ বলে অভিহিত করেন (কুরতুবী)।
(৩) سَيَصْلَى نَاراً
ذَاتَ لَهَبٍ ‘সত্বর সে প্রবেশ করবে
লেলিহান অগ্নিতে’।
অর্থাৎ ভয়ংকর দাহিকাশক্তিসম্পন্ন ও চূড়ান্তভাবে উত্তপ্ত
জাহান্নামে সে প্রবেশ করবে। صَلَى يَصْلَى
صَلْيًا ‘প্রবেশ
করা’। যেমন আল্লাহ বলেন, ثُمَّ إِنَّهُمْ
لَصَالُوا الْجَحِيْمِ- ‘অতঃপর
তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (মুত্বাফফেফীন ৮৩/১৬)। إِلاَّ مَنْ
هُوَ صَالِ الْجَحِيْمِ ‘কেবল তাদের ব্যতীত যারা
জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (ছাফফাত ৩৭/১৬৩)। ذَاتَ لَهَبٍ অর্থ ذات اشتعال
وتلهّب وإحراق
شديد‘জোশ ও স্ফুলিঙ্গওয়ালা এবং প্রচন্ড দাহিকাশক্তি
সম্পন্ন’ (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)। আয়াতে سَيَصْلَى ‘সত্বর
সে প্রবেশ করবে’ বলা হয়েছে। অথচ তা ক্বিয়ামতের পরে ঘটবে।
এখানে س এসে تحقيق বা ‘নিশ্চয়তা’
অর্থে। অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই সে প্রবেশ করবে’। দুনিয়ার হিসাবে ক্বিয়ামত দূরের হলেও আখেরাতের হিসাবে তা
খুবই নিকটবর্তী। ঘুমন্ত মানুষ সারারাত ঘুমিয়ে উঠে যেমন বলে এইমাত্র ঘুমালাম।
পুনরুত্থান দিবসে মানুষের ভাবনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, كَأَنَّهُمْ يَوْمَ
يَرَوْنَهَا لَمْ
يَلْبَثُوا إِلاَّ
عَشِيَّةً أَوْ
ضُحَاهَا ‘সেদিন
যখন তারা এটা দেখবে, তখন তাদের মনে হবে, তারা (দুনিয়াতে) একটি রাত্রি বা একটি দিনের অধিক অবস্থান করেনি’ (নাযে‘আত ৭৯/৪৬)। আল্লাহ বলেন, إِنَّهُمْ يَرَوْنَهُ
بَعِيْدًا- وَنَرَاهُ
قَرِيْبًا- ‘তারা
ঐ দিনকে (ক্বিয়ামতকে) অনেক দূরে মনে করে’। ‘কিন্তু আমরা তা দেখছি নিকটে’ (মা‘আরিজ ৭০/৬-৭)।
বিদ‘আতীরা
তাদের আবিষ্কৃত মীলাদুন্নবীর মজলিসে জাল হাদীছ বলে থাকে যে, রাসূল
(সাঃ)-এর জন্মগ্রহণে খুশী হওয়ার কারণে প্রতি সোমবার আবু লাহাবের উপর জাহান্নামের
শাস্তি মওফূফ করা হয়। তাছাড়া অন্যদিন জাহান্নামে আযাব হ’লেও
তার শাহাদাত অঙ্গুলিটি আযাবমুক্ত থাকে। কেননা সে রাসূল জন্মের খবরে খুশী হয়ে ঐ
আঙ্গুলটি উঁচু করে দৌড়ে সবাইকে সুসংবাদটি পৌঁছে দিয়েছিল’। নিঃসন্দেহে এগুলি বিদ‘আতীদের উদ্ভট কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়।
এবিষয়ে কুফরী অবস্থায় চাচা আববাস-এর একটি স্বপ্নের কথা বলা হয়, যার কোন ছহীহ ভিত্তি নেই।
ইবনু কাছীর বলেন, বিদ্বানগণ বলেন যে, সূরাটি
রাসূল (সাঃ)-এর নবুঅতের অন্যতম দলীল। কেননা আবু লাহাব ও তার স্ত্রী প্রকাশ্যে বা
গোপনে মৃত্যু অবধি কখনো ঈমান আনেনি। বরং কাফের অবস্থাতেই উভয়ের মৃত্যু হয়েছে। অত্র
আয়াতে যার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সূরাটি আবু
লাহাবের মৃত্যুর দশ বছর পূর্বে নাযিল হয়।
শিক্ষণীয় বিষয় এই যে, কুরায়েশ নেতাদের নির্যাতিত হাবশী গোলাম
বেলাল ইসলামের বরকতে মহা সম্মানিত হ’ল। আর ইসলাম গ্রহণ না
করায় সম্মানিত কুরায়েশনেতা আবু লাহাব অসম্মানিত ও জাহান্নামী হ’ল। ফরয ও নফল ছালাতসমূহে মুসলমান যতবার এই সূরা পাঠ করে, ততবার প্রতি হরফে দশটি করে নেকী পায়। অথচ তাতে আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর
প্রতি অভিশাপ ও ধ্বংসের কথা বলা হয়। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের দ্বারা মর্যাদামন্ডিত
করুন-আমীন!
(৪) وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ
الْحَطَبِ ‘এবং
তার স্ত্রীও; যে ইন্ধন বহনকারিণী’।
অর্থাৎ আবু লাহাবের স্ত্রীও তার স্বামীর সাথে একইভাবে
জাহান্নামে প্রবেশ করবে। حَمَّالَةُ الْحَطَبِঅর্থ ‘ইন্ধন বহনকারী’। আগুন জ্বালানোর ইন্ধন হিসাবে যেসব খড়িকাঠ জমা করা হয়। আরবরা
দু’মুখো,
চোগলখোর ও গীবতকারীদের এই নামে আখ্যায়িত করত। কেননা এর দ্বারা
ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে দ্রুত অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে।
ইবনু আববাস, মুজাহিদ, ক্বাতাদাহ,
সুদ্দী প্রমুখ বলেন যে, আবু লাহাবের স্ত্রী
রাসূল (সাঃ)-এর পিছনে নিন্দা ও চোগলখুরী করে এই আগুন জ্বালানোর কাজটিই করত’
(কুরতুবী)। উক্ত মহিলা ‘উম্মে জামীল’ উপনামে
পরিচিত ছিল। যার অর্থ ‘সুন্দরের মা’। অথচ প্রকৃত অর্থে সে ছিল أم قبيح অর্থাৎ ‘নষ্টের মূল’। তাই কুরআন তার উপনাম বাদ দিয়ে حَمَّالَةَ الْحَطَبِ ‘খড়ি বহনকারিণী’ বলে তার চোগলখুরীর বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছে।
ক্বাতাদাহ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, সে সর্বদা রাসূল
(সাঃ)-এর দরিদ্রতাকে তাচ্ছিল্য করত। অথচ প্রচুর ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সীমাহীন
কৃপণতার কারণে সে নিজে কাঠ বহন করত। ফলে কৃপণ হিসাবে লোকেরা তাকে তাচ্ছিল্য করত।
এত ধন-সম্পদ তাদের কোন কাজে আসেনি। ইবনু যায়েদ ও যাহহাক বলেন, সে কাঁটাযুক্ত ঘাস ও লতাগুল্ম বহন করে এনে রাসূল (সাঃ) ও ছাহাবীদের চলার
পথে ছড়িয়ে দিত (কুরতুবী)। ইবনু জারীর এ বক্তব্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন (ইবনু কাছীর)।
(৫) فِيْ جِيْدِهَا
حَبْلٌ مِّن
مَّسَدٍ ‘তার
গলদেশে খর্জুরপত্রের পাকানো রশি’। অর্থাৎ খেজুরপাতা দিয়ে পাকানো রশি দিয়ে কাঁটাযু্ক্ত
লতাগুল্ম বেঁধে ঘাড়ে করে বা গলায় ঝুলিয়ে সে বহন করে আনত। হাসান বাছরী বলেন, ‘মাসাদ’ হ’ল ইয়ামনে উৎপন্ন এক প্রকার গাছের পাকানো রশি। আবু
ওবায়দা বলেন, পশমের রশি (কুরতুবী)। তানতাভী বলেন, কঠিনভাবে পাকানো রশি, যা গাছের ছালপাতা দিয়ে বা চামড়া দিয়ে বা অন্যকিছু দিয়ে তৈরী হ’তে পারে (তানতাভী)। যাহহাক ও অন্যান্যগণ বলেন, ‘ঐ রশিই ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের
রশি হবে’। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব বলেন, আবু লাহাবের স্ত্রীর
মণিমুক্তাখচিত বহু মূল্যবান একটি কণ্ঠহার ছিল। যেটা দেখিয়ে সে লোকদের বলত, وَاللاَّتِ وَالْعُزَّى
لَأُنْفِقَنَّهَا فِي
عَدَاوَةِ مُحَمَّدٍ- ‘লাত
ও ওযযার কসম! এটা আমি অবশ্যই ব্যয় করব মুহাম্মাদের শত্রুতার পিছনে’। এ কণ্ঠহারই তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আযাবের কণ্ঠহার হবে’ (কুরতুবী)।
কুরায়েশ বংশের একজন সম্মানিত ও ধনশালী ব্যক্তি হওয়া
সত্ত্বেও ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম আচরণ করায় আল্লাহ আবু লাহাবের
স্ত্রীকে নিম্নশ্রেণীর ‘কাঠ
কুড়ানী’ মহিলাদের সাথে তুলনা করেছেন’ (তানতাভী)।
আবু লাহাবের পরিণতিঃ
বদর যুদ্ধে পরাজয়ের দুঃসংবাদ মক্কায় পৌঁছবার সপ্তাহকাল পরে
আবু লাহাবের গলায় গুটিবসন্ত দেখা দেয় এবং তাতেই সে মারা পড়ে। সংক্রমণের ভয়ে তার
ছেলেরা তাকে ছেড়ে চলে যায়। কুরায়েশরা এই ব্যাধিকে মহামারী হিসাবে দারুণ ভয় পেত।
তিনদিন পরে লাশে পচন ধরলে কুরায়েশ-এর এক ব্যক্তির সহায়তায় আবু লাহাবের দুই ছেলে
লাশটি মক্কার উচ্চভূমিতে নিয়ে যায় এবং সেখানেই একটি গর্তে লাঠি দিয়ে ফেলে পাথর
চাপা দেয়। অহংকারী যালেমের পতন এভাবেই হয়। কুরআনের কথাই
সত্য প্রমাণিত হয়। তার মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তার কোন কাজে আসেনি।
আবু লাহাবের স্ত্রীর পরিণতিঃ
মুররাহ আল-হামদানী বলেন, আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল প্রতিদিন
কাঁটাযুক্ত ঝোপের বোঝা এনে মুসলমানদের চলার পথে ছড়িয়ে দিত। ইবনু যায়েদ ও যাহহাক
বলেন, সে রাতের বেলা একাজ করত। একদিন সে বোঝা বহনে অপারগ হয়ে
একটা পাথরের উপরে বসে পড়ে। তখন ফেরেশতা তাকে পিছন থেকে টেনে ধরে এবং সেখানেই তাকে
শেষ করে দেয়’ (কুরতুবী)।
বস্ত্ততঃ আবু লাহাব ও উম্মে জামীলের মত ধনশালী পুঁজিপতি
দুশমনরা সে যুগেও যেমন ইসলামের শত্রুতায় তাদের যথাসর্বস্ব ব্যয় করেছে, এ যুগেও তেমনি তারা তা
করে যাচ্ছে। সেদিন যেমন আবু লাহাব ও তার স্ত্রী গীবত-তোহমত ও অপপ্রচারের মাধ্যমে
শত্রুতা করেছিল, আজও তেমনি ইসলামের প্রকৃত খাদেমদের বিরুদ্ধে
শত্রুরা বিশ্বব্যাপী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে। আধুনিক
জাহেলী মতবাদসমূহের সাথে আপোষকারী শৈথিল্যবাদী মুসলিম নেতাদের তারা ‘মডারেট’ বা উদার বলে প্রশংসা করছে। পক্ষান্তরে
ইসলামের নিষ্ঠাবান অনুসারীদের তারা ‘ফান্ডামেন্টালিস্ট’
বা মৌলবাদী বলে গালি দিচ্ছে ও তাদের বিরুদ্ধে নানা অপবাদ ও মিথ্যা
প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। সেই সাথে দুর্বল ও নতজানু সরকারগুলোকে দিয়ে দেশে দেশে
দ্বীনদার মুসলমানদের উপরে মিথ্যা মামলা ও জেল-যুলুমসহ নানাবিধ নির্যাতন চালিয়ে
যাচ্ছে।
সেযুগে যেমন আল্লাহর ইচ্ছায় আবু লাহাবদের সকল ষড়যন্ত্র
নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল, এযুগেও তেমনি ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের বিরুদ্ধে যাবতীয়
চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে ইনশাআল্লাহ। অতএব হে মানুষ! ফিরে এসো প্রকৃত ইসলামের
পথে। দীপ্ত শপথ নিয়ে, নির্ভীকচিত্তে। এগিয়ে চল জান্নাতের
পানে।
সারকথাঃ
ইসলামের অভ্রান্ত সত্যকে প্রকাশ করার জন্য যুগোপযোগী মাধ্যম
সমূহকে কাজে লাগাতে হবে। যেভাবে রাসূল (সাঃ) সেযুগের নিয়ম অনুযায়ী ছাফা পাহাড়ে উঠে
নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের দাওয়াত দিয়েছিলেন। সেদিনের আবু লাহাবের ও উম্মে জামীলের
ন্যায় ইসলামের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শত্রু চিরকাল থাকবে এবং তারা অবশ্যই
জাহান্নামী হবে। কিন্তু আল্লাহর নিকটে মযলূম মুমিনরাই প্রকৃত বিজয়ী এবং যালেমরা
সর্বদা পরাজিত।
Source: https://bn.wikipedia.org/
http://i-onlinemedia.net/
No comments:
Post a Comment